Advertisements

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা | ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

Advertisements

ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে | ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বলতে কি বুঝ | ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি কী | ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য | ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে | ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য

 

এই ব্লগে আমরা ইতিমধ্যে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি, যেমন – মৌলিক অর্থনৈতিক সমস্যা, দেশের জিডিপি কিভাবে নির্ণয় করা হয়, জিএনপি কিভাবে নির্ণয় করা হয়, সুযোগ ব্যয় কী ইত্যাদি নিয়ে। আমরা আলোচনা করেছি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়েও। এই পোস্টটিতে আমরা আলোচনা করবো ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে। আমরা দেখবো ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি কাকে বলে এবং ধনতান্ত্রিক অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য । এই বিষয়টি সম্বন্ধে সম্পুর্ণ ধারণা পেতে পোস্টটি শেষ অবধি মন দিয়ে পড়ুন।

Advertisements

Advertisements

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কাকে বলে

আমরা জানি প্রত্যেকটি সমাজ বা দেশের অর্থনীতিকে তিনটি মূল অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান করতে হয় –

১) কি উত্‍পাদন করা হবে এবং কতটা উত্‍পাদন করা হবে?

২) কিভাবে উত্‍পাদন করা হবে?

৩) কাদের জন্য উত্‍পাদন করা হবে বা কিভাবে উত্‍পাদিত দ্রব্য সমাজে বন্টন করা হবে?

এই সমস্যার সমাধান করতে গিয়ে বিভিন্ন দেশ পৃথক পৃথক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা অবলম্বন করে থাকে। এমনই একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হল ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা।   

যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দেশের প্রতিটি ব্যক্তি বা কারখানা দ্রব্য বা পরিষেবার উত্‍পাদন, বন্টন, এবং ব্যবহার -এর ক্ষেত্রে সম্পুর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করেন এবং বাজার ব্যবস্থা সরকারী নিয়ন্ত্রণমুক্ত থাকে, তাকেই ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা বা ধনতান্ত্রিক অর্থনীতি বলে। ইংরেজিতে একেই Capitalist Economy বলা হয়ে থাকে। 

Advertisements

ধনতান্ত্রিক অর্থনীতিতে বাজারে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের ওপর ভিত্তি করে অর্থনীতির মূল তিনটি সমস্যার সমাধান করা হয়। এই অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সেইসকল পণ্যই উত্‍পাদিত হবে, যার বাজারে চাহিদা আছে। অর্থাত্‍ ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় সেই সকল দ্রব্যই উত্‍পাদিত হবে যা দেশীয় বাজারে অথবা বিদেশে মুনাফা সমেত বিক্রি করা যায়।

Advertisements

এক্ষেত্রে পণ্যের চাহিদা এবং উত্‍পাদকের সবচেয়ে বেশী সম্ভব মুনাফা -এই দুই বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদাহরণস্বরূপ, যদি বাজারে খেলনার চাহিদা থাকে তবেই খেলনা উত্‍পাদিত হবে, নচেত্‍ নয়, আবার যদি শ্রমিকের বদলে যন্ত্রের সাহায্যে পণ্য উত্‍পাদন করতে কম খরচ হয়, তবে যন্ত্রের সাহায্যেই পণ্য উত্‍পাদিত হবে। ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শুধুমাত্র চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং দ্রব্য ও পরিষেবা বন্টিত হয় ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে।

Advertisements

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় ব্যক্তি বা উদ্যোক্তা কি উত্‍পাদন করবেন, কতটা উত্‍পাদন করবেন, কিভাবে উত্‍পাদন করবেন, এবং কিভাবে তা সমাজে বন্টন করা হবে সে সম্পর্কে সম্পুর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করেন।

অর্থনৈতিক সমস্যা সমাধানে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বাজারে দ্রব্যের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে পণ্য উত্‍পাদিত হয়। এখান থেকে কি উত্‍পাদন করা হবে এবং কতটা উত্‍পাদন করা হবে? – এই প্রশ্নের সমাধান হয়ে যায়। আবার, এই ব্যবস্থায় উত্‍পাদকের জন্য সবচেয়ে লাভজনক পদ্ধতিতেই দ্রব্য উত্‍পাদিত হয়। এভাবে কিভাবে উত্‍পাদন করা হবে?- এই প্রশ্নেরও সমাধান হয়ে যায়। আবার, এই ব্যবস্থায় দ্রব্য ও পরিষেবা বন্টিত হয় ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। এভাবে কাদের জন্য উত্‍পাদন করা হবে বা কিভাবে উত্‍পাদিত দ্রব্য সমাজে বন্টন করা হবে? – এই সমস্যার সমাধান করা হয়।

Advertisements

যেসব দেশে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু আছে

বর্তমানে সম্পুর্ণ ভাবে ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা প্রায় কোনও দেশেই নেই। প্রায় সবকয়টি দেশই মিশ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তবুও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, ইতালি, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া ইত্যাদি দেশগুলিতে প্রায় ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কাছাকাছি অর্থব্যবস্থা দেখতে পাওয়া যায়।   

Advertisements

ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ: – 

 

সম্পদের মালিকানা

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় সম্পদ তথা উত্‍পাদনের উপকরণ, এবং উত্‍পাদিত দ্রব্যের (বিক্রি না হয় পর্যন্ত) ওপর উত্‍পাদকের মালিকানা থাকে।

অবাধ প্রতিযোগিতা

যেহেতু এই অর্থব্যবস্থা সরকারী নিয়ন্ত্রণমুক্ত, তাই এই ব্যবস্থায় উত্‍পাদক প্রতিষ্ঠানগুলি নিজেদের মধ্যে অবাধ প্রতিযোগিতায় রত থাকে।

উন্নত দ্রব্য উত্‍পাদন

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় যেহেতু উত্‍পাদক প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হয়, তাই তারা গ্রাহককে ক্রমাগত উন্নত দ্রব্য উত্‍পাদন/উন্নত পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করে।

উপভোক্তার স্বাধীনতা

উত্‍পাদক প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতার জন্য গ্রাহক সবচেয়ে কম দামে, সবচেয়ে সেরা দ্রব্যটি কেনার সুযোগ পান।

 

উত্‍পাদকের মুনাফা

এই ব্যবস্থায় উত্‍পাদক সম্ভাব্য সবচেয়ে কম খরচে দ্রব্য উত্‍পাদন করে, সম্ভাব্য সবচেয়ে বেশী দামে দ্রব্য বিক্রি করে সবচেয়ে বেশী সম্ভব মুনাফা অর্জন করেন।

সমাজে শ্রেণীবিভাগ

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় খুব সহজেই সমাজকে শ্রেণীবিভক্ত করা যায়। তুলনামূলক ভাবে উচ্চবিত্তের নিকট সম্পদের মালিকানা সবচেয়ে বেশী, মধ্যবিত্তের নিকট তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম, এবং নিম্নবিত্তের কাছে সবচেয়ে কম থাকে।

অসম বন্টন

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় আয় ও সম্পদ বণ্টনে বৈষম্য দেখা যায়। এক্ষেত্রে সম্পদের ব্যক্তি মালিকানা থাকায় সম্পদের অসম বন্টন হয়। এই ক্ষেত্রে যার সম্পদ যত বেশী তার আয় তত বেশী। উল্টোদিকে যার সম্পদ যত কম তার আয় তত কম।  

Advertisements

দ্রব্য ও পরিষেবার বন্টন

ধনতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থায় শুধুমাত্র চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নয়, বরং দ্রব্য ও পরিষেবা বন্টিত হয় ক্রেতার ক্রয়ক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে। উদাহরণস্বরূপ, দরিদ্রদের ঘর বানানোর চাহিদা রয়েছে, অথচ যেহেতু দরিদ্রদের ঘর কেনার ক্রয়ক্ষমতা নেই, তাই ধনতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দ্রব্যটি উত্‍পাদন করা হবে না।

Advertisements

 

 

আশা করি লেখাটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই বিষয়ে আপনার মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান বা আমাদের মেইল করুন [email protected] -এ। এছাড়া এই লেখাটি অন্য দের সাথে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এই ব্লগে আমরা ফাইন্যান্স বিষয়ক বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করি। যাতে আমাদের একটি লেখাও আপনার নজর না এড়ায়, তার জন্য ডান দিকের ঘণ্টা আইকনটিতে ক্লিক করে নোটিফিকেশন চালু করে রাখুন। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

Advertisements
Spread the love
Advertisements

Leave a Comment

error: Content is protected !!