Advertisements

সি আর আর | এস এল আর | সিআরআর ও এসএলআর কি

Advertisements

সিআরআর ও এসএলআর কি | সিআরআর | সিআরআর ও এসএলআর | সি আর আর রেট কি | সিআরআর ও এসএলআর কি | এস এল আর | এস এল আর রেট কি | এস এল আর ব্যাংক

Advertisements

 

বন্ধুরা, আপনি প্রায়ই খবরে শুনে থাকবেন যে সিআরআর রেট বৃদ্ধি করা হলো, বা কমানো হলো, অথবা এসএলআর রেট বৃদ্ধি করা হলো, বা কমানো হলো। কিন্তু আপনি কী জানেন এই সিআরআর বা এসএলআর কি? সিআরআর বা এসএলআর এর গুরুত্বই বা কি? বিস্তারিত জেনে নিতে পোস্টটি শেষ অবধি পড়ুন।

Advertisements

 

সিআরআর ও এসএলআর কি

Advertisements

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক বিভিন্ন পদ্ধতি অবলম্বন করে। সিআরআর এবং এসএলআর হলো সেইসব পদ্ধতি গুলির মধ্যে অন্যতম। নিচে সিআরআর এবং এসএলআর সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।   

 

সি আর আর কি

ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া বা আরবিআই (RBI), NDTL বা Net Demand and Time Liabilities -এর ওপর ভিত্তি করে দেশের তফসিলী বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলির সি আর আর রেট ঘোষণা করে। তাই সিআরআর বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও কী বুঝতে গেলে প্রথমে আমাদের জেনে নিতে হবে NDTL কি।

Advertisements

তারও আগে, ব্যাংকের ক্ষেত্রে অ্যাসেট এন্ড লায়াবিলিটিস বলতে কি বোঝায় জেনে নেওয়া যাক।

অ্যাসেট (Asset)

  • ব্যাংকের অ্যাসেট হলো যা ব্যাংক অন্যের থেকে ফেরত পাবে।

 

লায়াবিলিটিস (Liabilities)

  • ব্যাংকের লায়াবিলিটিস হলো যা ব্যাংককে অন্যকে ফেরত দিতে হবে।

 

NDTL (Net Demand and Time Liabilities)

নেট ডিমান্ড এন্ড টাইম লায়াবিলিটিস কি তা বোঝার জন্য ডিমান্ড লায়াবিলিটিস কি এবং টাইম লায়াবিলিটিস কি তা বুঝে নেওয়া যাক।

ডিমান্ড লায়াবিলিটিস (Demand Liabilities) – ব্যাংকের ডিমান্ড লায়াবিলিটিস হলো, যা কিনা গ্রাহক চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংক থেকে ফেরত পাবে। যেমন – সেভিংস ডিপোজিট, কারেন্ট ডিপোজিট, ডিমান্ড ড্রাফ্ট, ব্যাংক গ্যারান্টি, ইত্যাদি।  

Advertisements

টাইম লায়াবিলিটিস (Time Liabilities) – ব্যাংকের টাইম লায়াবিলিটিস হলো, যা কিনা গ্রাহক চাইলেই সঙ্গে সঙ্গে ফেরত পাবেন না। বরং, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরই ব্যাংক থেকে ফেরত পাওয়া যাবে। যেমন – ফিক্সড ডিপোজিট, রেকারিং ডিপোজিট, ক্যাশ সার্টিফিকেট ইত্যাদি।

Advertisements

আবার, একটি ব্যাংক অন্য ব্যাংককেও ঋণ দেয়। এই ঋণ পরবর্তীকালে ফেরত্‍ পাওয়া যায়। তাই যে ব্যাংক ঋণ দিচ্ছে তার ক্ষেত্রে এটি অ্যাসেট। একে বলা হয় Asset with other Bank।   

নেট ডিমান্ড এন্ড টাইম লায়াবিলিটিস (NDTL) -এর সুত্র হলো –

NDTL = Demand Liabilities + Time Liabilities – Asset with Other Bank

ব্যাপারটি একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক,

ধরা যাক, XYZ ব্যাংকে,

  • গ্রাহক A তার সেভিংস অ্যাকাউন্টে ১০০০ টাকা জমা করলো।
  • গ্রাহক B তার কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ৫০০ টাকা জমা করলো।
  • গ্রাহক C একটি ৫০০০ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট করলেন।
  • আবার, XYZ ব্যাংক ABC ব্যাংকে ৩০০ টাকা ধার দিয়েছে।  

তাহলে, XYZ ব্যাংকের নেট ডিমান্ড এন্ড টাইম লায়াবিলিটিস (NDTL) হলো, ১০০০+৫০০-৩০০ = ১২০০ টাকা। 

 

সি আর আর

ভারতের সমস্ত তফসিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে প্রতিদিন তাদের NDTL -এর একটি অংশ ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হয়। NDTL -এর যে অনুপাতিক পরিমাণ ব্যাংক গুলিকে জমা রাখতে হয় তাই হলো সিআরআর বা ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও। সি আর আর রেট কী হবে তা রিজার্ভ ব্যাংক ঠিক করে, এবং এই সিআরআর -এর হার ৩ থেকে ১৫% মধ্যে থাকে। বর্তমানে সি আর আর রেট হলো ৪.৫০%। ওপরে দেওয়া XYZ ব্যাংকের উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট ভাবে বুঝে নেওয়া যাক।

Advertisements

আমরা দেখলাম, XYZ ব্যাংকের NDTL হলো ১২০০ টাকা। সি আর আর রেট -এর হিসাব করা হয় NDTL -এর ওপর ভিত্তি করে। অতএব, বলা যায়, ৪.৫০% সি আর আর রেট -এ XYZ ব্যাংককে –

Advertisements
  • ১১.৯৫ টাকা ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হবে, এবং
  • বাকি টাকা অর্থাত্‍, ১১৮৮.০৫ টাকাই ব্যাংক ব্যবহার করতে পারবে।  

 

সি আর আর -এর বৈশিষ্ট

  • সি আর আর কে ক্যাশ হিসেবে গচ্ছিত রাখতে হয়।
  • সি আর আর হিসেবে গচ্ছিত টাকার ওপর কোনও সুদ পাওয়া যায় না।
  • যেহেতু সি আর আর হিসেবে গচ্ছিত টাকার ওপর কোনও সুদ পাওয়া যায় না, তাই স্বভাবতই ব্যাংক গুলি নিম্ন সি আর আর রেট চায়।
  • আবার, সি আর আর রেট বৃদ্ধি করলে ব্যাংকগুলিও ঋণের ওপর সুদের হার বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়।
  • সি আর আর বজায় না রাখতে পারলে ব্যাংককে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকে জরিমানা দিতে হয়।

 

সি আর আর রেট কি

বর্তমানে ভারতে সি আর আর রেট হলো ৪.৫০%।

 

এস এল আর

ভারতের সমস্ত তফসিল বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলিকে প্রতিদিন তাদের NDTL -এর একটি অংশ তরল রূপে (Liquid Fund) জমা রাখতে হয়। NDTL -এর এই যে অনুপাতিক পরিমাণ ব্যাংক গুলিকে তরল রূপে জমা রাখতে হয় তাই হলো এসএলআর বা স্ট্যাটুটারি লিকুইড রেশিও।  এসএলআর রেট কী হবে তা রিজার্ভ ব্যাংক ঠিক করে, এবং এই এসএলআর -এর হার ২৫ থেকে ৪০% মধ্যে থাকে। বর্তমানে এসএলআর রেট হলো ১৮%। ওপরে দেওয়া XYZ ব্যাংকের উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট ভাবে বুঝে নেওয়া যাক।

Advertisements

আমরা দেখলাম, XYZ ব্যাংকের NDTL হলো ১২০০ টাকা। এসএলআর রেট -এর হিসাব করা হয় NDTL -এর ওপর ভিত্তি করে। অতএব, বলা যায়, ১৮% এসএলআর রেট -এ XYZ ব্যাংককে –

  • ২১৬ টাকা ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের কাছে জমা রাখতে হবে, এবং
  • সিআরআর ছাড়া বাকি টাকা অর্থাত্‍, (১২০০-২১৬-১১.৯৫) = ৯৭২.০৫ টাকাই ব্যাংক ব্যবহার করতে পারবে।

 

এসএলআর -এর বৈশিষ্ট

  • এসএলআর কে তরল রূপে অর্থাত্‍ সরকারী ঋণপত্র, ক্যাশ, অথবা সোনা রূপে গচ্ছিত রাখতে হয়।
  • এসএলআর হিসেবে গচ্ছিত টাকার ওপর সুদ পাওয়া যায়।
  • যেহেতু এসএলআর হিসেবে গচ্ছিত টাকা ব্যাংক ঋণ হিসেবে দিতে পারেনা তাই স্বভাবতই ব্যাংক গুলি নিম্ন এসএলআর রেট চায়।
  • আবার, এসএলআর রেট বৃদ্ধি করলে ব্যাংকগুলিও ঋণের ওপর সুদের হার বৃদ্ধি করতে বাধ্য হয়।
  • এসএলআর বজায় না রাখতে পারলে ব্যাংককে ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংকে জরিমানা দিতে হয়।

 

এসএলআর রেট কি

বর্তমানে ভারতে এস এল আর রেট হলো ১৮%।

 

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রনে সিআরআর এবং এসএলআর

দেশে মুদ্রাস্ফীতি এবং প্রবৃদ্ধির হারের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক সিআরআর এবং এলএরআর রেটে পরিবর্তন করে। মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে সিআরআর এবং এসএলআর রেট বাড়িয়ে দেওয়া হয়। ফলে,  সিআরআর ও এসএলআর রেট বৃদ্ধি পেলে ব্যাংকগুলিও তাদের সুদের হার বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষের মধ্যে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমে যায়। ঋণ কম নিলে বাজারে টাকার পরিমাণ কমে যায়। মানুষের কাছে টাকার যোগান কমে গেলে জিনিসপত্রের চাহিদা কমে যায়। জিনিসপত্রের চাহিদা কমে গেলে তার দাম কমে যায়। এভাবে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করে।

Advertisements

আবার, মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রনেই আছে, অথচ প্রবৃদ্ধির হার বাড়াতে হবে, সেক্ষেত্রে সিআরআর এবং এসএলআর রেট কমিয়ে দেওয়া হয়। ফলে,  সিআরআর ও এসএলআর রেট কমে গেলে ব্যাংকগুলিও তাদের সুদের হার কমিয়ে দেয়। ফলে মানুষের মধ্যে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। ঋণ বেশি নিলে বাজারে টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। মানুষের কাছে টাকার যোগান বৃদ্ধি পেলে জিনিসপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। জিনিসপত্রের চাহিদা বৃদ্ধি পেলে তার উত্‍পাদনও বৃদ্ধি পায়। এভাবে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংক সিআরআর ও এসএলআর -এর সাহায্যে দেশের প্রবৃদ্ধি  নিয়ন্ত্রণ করে।

Advertisements

 

প্রায়শই জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নগুলি

FAQ – সিআরআর ও এসএলআর