বন্ধুরা আজ থেকে আমাদের এই ব্লগে আমরা শুরু করছি একটি নতুন সিরিজ। এই সিরিজে আমরা শেয়ার বাজারের সাথে যুক্ত বিভিন্ন শব্দ গুলির বিশ্লেষণ করবো, সম্পুর্ণ বাংলায়। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করুন (Invest in Stock Market) বা ট্রেডিং (Share Market Trading), এই সব শব্দ বা টার্ম (Terms related to Share Market) গুলি না জানলে আপনার পক্ষে সফল ট্রেডার বা ইনভেস্টর কোনোটাই হওয়া সম্ভব নয়। এই সিরিজে আমদের আজকের বিষয় মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন (Market Capitalization)। চলুন এই বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কি
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কি তা বোঝার আগে আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার (Outstanding Share) কি তা বুঝে নেওয়া দরকার। তাহলে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কি তা বুঝতে সুবিধা হবে।
- কোনও একটি নির্দিষ্ট সময়ে, একটি কোম্পানীর সমস্ত শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার গুলির সংখ্যা মিলিয়ে যত গুলি শেয়ার হয় তাকেই বলে আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার (Outstanding Share)। কোনও কোম্পানীর আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার কত তা কোম্পানীর ব্যালান্স শীটে দেখা যায়। আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা সবসময় একইরকম থাকে না। যখন কোম্পানী বাজার থেকে পুঁজি তোলার জন্য শেয়ার বিক্রি করে বা স্টক স্প্লিট করে তখন আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়, আবার উল্টোদিকে কোম্পানী যদি বাইব্যাক বা রিভার্স স্প্লিট -এর মতো কর্পোরেট অ্যাক্শন নেয় তাহলে আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ারের সংখ্যা কমে যায়।
এবার যেহেতু আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার কি তা আপনি বুঝে নিয়েছেন, এবার আসা যাক মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনে। ক্যাপিটালাইজেশন বলতে বোঝায়, কোনও কোম্পানীর বর্তমান বাজার মূল্য। অর্থাত্, কোনও একটি কোম্পানীকে যদি আপনি পুরোপুরি কিনে নিতে চান, তার জন্য আপনাকে যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে তাই হল কোনও কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন।
কোনও কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন কত তা খুব সহজেই জানা যায়। এর জন্য আপনাকে সেই কোম্পানীর শেয়ারের বর্তমান মূল্যের সাথে কোম্পানীর আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার গুণ করুন। যে ফলাফল বেরোবে তাই কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন। উদাহরণ স্বরূপ ITC কোম্পানীর কথা বলা যাক। কোম্পানীটির বর্তমানে আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার ১২৩২ কোটি। আজ ১৯শে জানুয়ারী ITC -এর একটি শেয়ারের বাজার মূল্য ২১৯ টাকা। এখন, (১২৩২ কোটি X ২১৯) = ২,৭০,২৩৮ কোটি (প্রায়) হলো ITC -এর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন।
অতএব,
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন = (কোম্পানীর আউটস্ট্যান্ডিং শেয়ার X কোম্পানীর একটি শেয়ারের বর্তমান মূল্য)
মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন দেখেই বিচার করা হয় কোনও কোম্পানী কতটা বড়। ভারতে মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের ভিত্তিতে শেয়ার বাজারের কোম্পানীগুলিকে লার্জ ক্যাপ, মিড ক্যাপ, ও স্মল ক্যাপ এই তিন ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে।
লার্জ ক্যাপ কোম্পানী
ভারতে কোনও কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ২০,০০০ কোটি টাকা বা তার বেশী হলে তাকে লার্জ ক্যাপ কোম্পানী বলা হয়। যেমন – নেসলে ইন্ডিয়া, পেজ ইনডাস্ট্রিজ, রিলায়্যান্স, এইচডিএফসি ব্যাংক ইত্যাদি হলো লার্জ ক্যাপ কোম্পানী।
মিড ক্যাপ কোম্পানী
ভারতে কোনও কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ৫,০০০ কোটি টাকার বেশী কিন্তু ২০,০০০ কোটি টাকার কম হলে তাকে মিড ক্যাপ কোম্পানী বলা হয়। যেমন – অজন্তা ফার্মা, সিডিএসএল (CDSL), জিলেট ইন্ডিয়া, এক্সাইড ইনডাস্ট্রিজ, ইত্যাদি হলো মিড ক্যাপ কোম্পানী।
স্মল ক্যাপ কোম্পানী
ভারতে কোনও কোম্পানীর মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন ৫,০০০ কোটি টাকার কম হলে তাকে স্মল ক্যাপ কোম্পানী বলা হয়। যেমন – মিণ্ডা কর্পোরেশন, আরতি ড্রাগ্স, CEAT ইত্যাদি হলো স্মল ক্যাপ কোম্পানী।
সাধারণত যত বড় কোম্পানী, সেই কোম্পানীতে বিনিয়োগ করা তত বেশী নিরাপদ মনে করা হয়।
আশা করি লেখাটি পড়ে আপনারা উপকৃত হয়েছেন। এই বিষয়ে আপনার মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান বা আমাদের মেইল করুন [email protected] -এ। এছাড়া এই লেখাটি অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এই ব্লগে আমরা ফাইন্যান্স বিষয়ক বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করি। যাতে আমাদের একটি লেখাও আপনার নজর না এড়ায়, তার জন্য ডান দিকের ঘণ্টা আইকনটিতে ক্লিক করে নোটিফিকেশন চালু করে রাখুন। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
আরও পড়ুন: –