আমরা বিনিয়োগ করার কথা যখন ভাবি, আমাদের কাছে যে বিকল্প গুলি থাকে তা হল – ফিক্সড ডিপোজিট, পিপিএফ, ইপিএফ, বন্ড, শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড। তবে এগুলির বেশীর ভাগেরই রিটার্ন এত কম যে সেখানে বিনিয়োগ করা অর্থহীন; ব্যাতিক্রম শেয়ার বাজার এবং মিউচুয়াল ফান্ড। শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার জন্য আপনার প্রয়োজন যথেষ্ঠ অনুসন্ধান এবং এই অনুসন্ধান করার জন্য শেয়ার বাজার সম্বন্ধে যথেষ্ঠ জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের বেশীর ভাগেরই না আছে সেই পরিমাণ জ্ঞান বা জ্ঞানার্জনের সময়। এই পরিস্থিতিতে মিউচুয়াল ফান্ড হল বিনিয়োগের আদর্শ জায়গা। কিভাবে ? চলুন দেখে নেওয়া যাক।
ভাঁড়ুদত্তের কথা
ভাঁড়ুদত্ত যখন তাঁর বান্ধবী মিনতিকে বিয়ের প্রস্তাবটি দিলেন, মিনতি তাকে সরাসরিই জানিয়ে দিলো যে বিয়ের আগে ভাঁড়ুদত্তের নামে যেনো একটি বাড়ী অবশ্যই থাকে। যদি সে বাড়ী কিনতে পারে তবেই তাদের বিয়ে হবে, আর এর জন্য সে ভাঁড়ুদত্তকে মাত্র ৫ বছর সময় দিলো। এরপর ভাঁড়ুদত্ত বাড়ী দেখতে শুরু করলেন, একটি পছন্দও করে ফেললেন এবং জানলেন ৫ বছর পর ওই বাড়ী বিক্রি হবে এবং সেই সময় ওই বাড়ীর মূল্য হবে ১,০০০ টাকা 🙂 । অথচ ভাঁড়ুদত্ত -এর কাছে আছে ৫০০ টাকা। ভাঁড়ুদত্ত পড়লেন মহা বিপাকে। কি করা যায় ? তখন তাঁর এক বন্ধু তাকে উপদেশ দিলেন, ”ভাই ভাঁড়ুদত্ত তুমি কোনও ভালো কোম্পানীর শেয়ার কিনে রেখে দাও যা কিনা বছরে গড়ে ১৫% রিটার্ন দেয়। তাহলে তোমার বিনিয়োগ করা ৫০০ টাকা খুব সহজেই ১,০০০ টাকায় পৌছে যাবে।” ভাঁড়ুদত্ত যেনো হাতে স্বর্গ পেলেন। এবার আর তাঁর বিয়ে ঠেকায় কে। কিন্তু পরক্ষণেই ভাঁড়ুদত্তের মুখে গভীর দুশ্চিন্তার ছাপ পড়লো। তাঁর মনে হলো, ভালো কোম্পানীর শেয়ার যে কিনবেন, কিন্তু বুঝবেন কিভাবে যে কোন কোম্পানীর শেয়ার ভালো; তাঁর জন্য তো এসব বিষয়ে অনেক জ্ঞান থাকা দরকার, তা তো তার নেই। ভাঁড়ুদত্তের দুশ্চিন্তাগ্রস্থ মুখ দেখে তাঁর বন্ধুটি ভাঁড়ুদত্তের মনের ভাব বুঝতে পারলেন। তিনি বললেন, “ওহে বন্ধু চিন্তা করছো কেনো, আমি তোমায় বলে দেবো কোন কোম্পানীর শেয়ার তুমি কিনবে। বন্ধুটি বলেও দিলেন। তিনি বললেন ‘ভাই তুমি Reliance এর শেয়ার কিনে নাও। এই কথা বলে বন্ধুটি চলে গেলেন এবং যাওয়ার সময় ভাঁড়ুদত্তকে শেয়ার কেনাবেচা করার জন্য Zerodha বা Upstox একটি ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খুলতে বললেন। এরপর ভাঁড়ুদত্ত Zerodha তে অ্যাকাউন্টও খুলে ফেললেন এবং তারপর যখন দেখলেন Reliance এর একটি শেয়ারের দামই ২৫০০ টাকা অথচ তার কাছে আছে মাত্র ৫০০ টাকা তখন পড়লেন মুশকিলে। এই অবস্থায় ভাঁড়ুদত্ত জানতে পারলেন মিউচুয়াল ফান্ডের কথা। অনেক অনুসন্ধান করে মিউচুয়াল ফান্ড সম্বন্ধে অনেক কথা জানতে পারলেন। এবার আমরাও সেসব কথা জেনে নেবো।
মিউচুয়াল ফান্ড কি?
মিউচুয়াল ফান্ড হল অনেক বিনিয়োগকারী মিলে গঠিত এমন একটি ফান্ড যা কিনা শেয়ার বাজার, ঋণ ফান্ড (Debt Fund), সোনা, বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে । এই ফান্ডটিতে অনেক বিনিয়োগকারী মিলে অর্থ জমা করে। মিউচুয়াল ফান্ডের আকার নির্ভর করে তার ফান্ডের আকার (Fund Size) বা ওই মিউচুয়াল ফান্ডে কত টাকা জমা হচ্ছে তার ওপর। উদাহরণ স্বরূপ, কোনও মিউচুয়াল ফান্ড যেমন ১০০ কোটির হতে পারে, তেমনি কোনও মিউচুয়াল ফান্ড আবার ৫০০০ কোটিরও হতে পারে।
মিউচুয়াল ফান্ড কিভাবে কাজ করে ?
এটি বোঝার জন্য আমরা আবার ভাঁড়ুদত্তের কথা শুনবো। ভাঁড়ুদত্ত যখন মিউচুয়াল ফান্ডের কথা জানতে পারলেন তখন তিনি Ind Money অ্যাপ্লিকেশনটি গুগল প্লেস্টোর থেকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করার পর রেজিস্ট্রেশন করে নিলেন। এরপর ওই অ্যাপ্লিকেশনের মিউচুয়াল ফান্ড বিকল্পে গিয়ে HDFC Index Fund Nifty 50 Plan – Direct Plan মিউচুয়াল ফান্ডে ৫০০ টাকা জমা করে দিলেন। এই ৫০০ জমা করার জন্য এই মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী ভাঁড়ুদত্তকে ৩ NAV দিলো।
মিউচুয়াল ফান্ডে NAV কি ?
NAV বা Net Asset Value হলো একটি একক। এটি অনেকটা শেয়ার সংখ্যারই মতো। মনে করুন আপনি কোনও একটি কোম্পানীর শেয়ার কিনলেন যার মূল্য ৫০০ টাকা। এর অর্থ আপনি ওই কোম্পানীর একটি শেয়ার পেলেন। মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে আপনি পাবেন NAV। যেমন গল্পে ৫০০ টাকা জমা করে ভাঁড়ুদত্ত পেলেন ৩ NAV, কারণ ওই মিউচুয়াল ফান্ডের এক NAV -এর বর্তমান মূল্য ১৬৬.২৮ টাকা; সেই হিসাবে (৫০০/১৬৬.২৮) ভাঁড়ুদত্ত পেয়েছেন ৩ NAV।
সরল ভাষায় মিউচুয়াল ফান্ড থেকে পাওয়া আপনার NAV একক = (আপনি কত টাকা বিনিয়োগ করছেন/মিউচুয়াল ফান্ডের বর্তমান ১ NAV -এর মূল্য) ।
আবার অন্য ভাবেও এর ব্যাখা হয়। মনে করা যাক আপনি ১,০০০ টাকা কোনো মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চান। বর্তমানে সেই মিউচুয়াল ফান্ডের NAV ৫০ টাকা। এর অর্থ হল আপনি ১,০০০ টাকা দিয়ে এই মিউচুয়াল ফান্ডের (১০০০/৫০) = ২০ একক NAV কিনতে পারবেন।
মিউচুয়াল ফান্ড থেকে কিভাবে অর্থ উপার্জন করবো ?
এটা জানার জন্য আমরা আবার গল্পে ফিরবো। ভাঁড়ুদত্ত মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীর ৩ NAV কিনে রেখে দিলেন। এই মিউচুয়াল ফান্ড এখনো অবধি ১৪.১৪% হারে রিটার্ন দিয়েছে। যদি এই মিউচুয়াল ফান্ড এর পর থেকে আগামী ৫ বছর অবধি প্রতি বছর গড়ে ১৪% হারেও রিটার্ন দেয় তাহলে এই কোম্পানীর ১ NAV -এর মূল্য ৫ বছর পর ১৬৬.২৮ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৩৬৫ টাকা। এদিকে ভাঁড়ুদত্তের কাছে আছে ৩ NAV। তখন যদি ভাঁড়ুদত্ত তাঁর ৩ NAV বিক্রি করে দেন তাহলে তিনি পাবেন প্রায় ১,১০০ টাকা। অর্থাত্ মাত্র ৫ বছরে তাঁর টাকা দ্বিগুণেরও বেশী বৃদ্ধি পাবে।
মিউচুয়াল ফান্ড এর প্রকারভেদ ?
মিউচুয়াল ফান্ড বিভিন্ন প্রকারের হয়। মিউচুয়াল ফান্ডটি কোথায় বিনিয়োগ করছে তার ওপর ভিত্তি করে মিউচুয়াল ফাণ্ডকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে –
১) Equity মিউচুয়াল ফান্ড
২) Debt মিউচুয়াল ফান্ড
৩) Hybrid মিউচুয়াল ফান্ড
Equity মিউচুয়াল ফান্ড তার বেশীর ভাগ মূলধন (Capital) Equity বা শেয়ার বাজারের শেয়ারে বিনিয়োগ করে। কোন ধরণের শেয়ারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে Equity মিউচুয়াল ফান্ডকে আবার চার ভাগে ভাগ করা যায় –
ক) Large Cap মিউচুয়াল ফান্ড
খ) Mid Cap মিউচুয়াল ফান্ড
গ) Small Cap মিউচুয়াল ফান্ড
ঘ) Multi Cap মিউচুয়াল ফান্ড
Large Cap মিউচুয়াল ফান্ড তার মূলধন শেয়ার বাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের দিক থেকে বৃহত্ কোম্পানী গুলিতে বিনিয়োগ করে।
Mid Cap মিউচুয়াল ফান্ড তার মূলধন শেয়ার বাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের দিক থেকে মাঝারি মাপের কোম্পানী গুলিতে বিনিয়োগ করে।
Small Cap মিউচুয়াল ফান্ড তার মূলধন শেয়ার বাজারের মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের দিক থেকে ক্ষুদ্র কোম্পানী গুলিতে বিনিয়োগ করে।
Multi Cap মিউচুয়াল ফান্ড তার মূলধন শেয়ার বাজারের নথিভুক্ত থাকা বড়, মাঝারি ও ছোটো কোম্পানী মিলিয়ে বিনিয়োগ করে।
Debt মিউচুয়াল ফান্ড এমন সব স্থানে বিনিয়োগ করে যেখান থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিটার্ন পাওয়া যায়। যেমন, সরকারী বন্ড, ডিবেঞ্চার, ইত্যাদিতে।
Hybrid মিউচুয়াল ফান্ড তার মূলধনের কিছু পরিমাণ Equity বা শেয়ারে এবং কিছু পরিমাণ সরকারী বন্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করে।
আবার এমন কিছু মিউচুয়াল ফান্ড আছে যেখানে কর ছাড় পাওয়া যায়। এই ধরণের মিউচুয়াল ফাণ্ডকে Equity Linked Savings Scheme বা ELSS বলা হয়।
আর এক ধরণের মিউচুয়াল ফান্ড আছে যাকে বলা হয় Index মিউচুয়াল ফান্ড। এই ধরণের ফান্ড সরাসরি শেয়ার বাজারের সূচক অর্থাত্ নিফটি এবং সেনসেক্স -এর সাথে সংযুক্ত থাকে। অর্থাত্ নিফটি বা সেনসেক্স যে হারে বৃদ্ধি দেখায় এই ফান্ডও সেই হারেই বৃদ্ধি পায়।
মিউচুয়াল ফান্ড এর ওপর কর
মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করে আপনি যে মুনাফা অর্জন করেন তার ওপর আপনাকে কর দিতে হয়। Equity মিউচুয়াল ফান্ড এবং Hybrid মিউচুয়াল ফান্ড থেকে অর্জিত মুনাফার ওপর ১০% ও ১৫% হারে কর নেওয়া হয়। যদি আপনি ১ বছরের মধ্যে এই দুই প্রকারের মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করেন তাহলে আপনার অর্জিত মুনাফার ওপর ১৫% হারে কর ধার্য হয়, আবার ১ বছরের পর বিক্রি করলে ১০% হারে কর ধার্য হয়। তবে এই কর তখনই দিতে হবে যদি আপনার মুনাফা ১ লক্ষ টাকার বেশী হয়।
অন্যদিকে আপনি যদি Debt মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করেন সেই ক্ষেত্রে ওপরে উল্লিখিত হারে আপনাকে কোনো প্রকার কর দিতে হয় না। এই ক্ষেত্রে আপনার অর্জিত মুনাফা আপনার আয়ের মধ্যে সংযুক্ত হয়ে যায় এবং আপনি আয়কর দেওয়ার যে ধাপে পড়েন, সে ধাপ অনুযায়ী কর দিতে হয়।
মিউচুয়াল ফান্ডে কিভাবে বিনিয়োগ করবেন
আপনি বাড়ী বসে আপনার মোবাইল থেকে অনলাইনেই মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এর জন্য একটি খুব ভালো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন হলো IND Money। এই অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে খুব সজেই মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়াও এই অ্যাপ্লিকেশন টিতে অনেক মিউচুয়াল ফান্ড নথিভুক্ত রয়েছে।
এর মধ্যে থেকে আপনার পছন্দ মত মিউচুয়াল ফান্ড আপনি বাছাই করে নিতে পারবেন। এছাড়াও মিউচুয়াল ফান্ড গুলির সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্যও পেয়ে যাবেন এই অ্যাপ্লিকেশনটিতে যা কিনা আপনাকে সঠিক মিউচুয়াল ফণ্ডে বিনিয়োগ করতে সাহায্য করবে।
নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করে ফেলুন।
এরপর রেজিস্ট্রেশন সম্পুর্ণ করে আপনার পছন্দ মতো মিউচুয়াল ফান্ড বেছে নিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করে ফেলুন।
এ ক্ষেত্রে আপনি একবারে অনেকটা টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন, যাকে Lumpsum বিনিয়োগ বলে। আবার, আপনি প্রতি মাসে মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকাও বিনিয়োগ করতে পারেন। একে Systematic Investment Plan বা SIP বলে। SIP পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করলে, আপনার মিউচুয়াল ফান্ডের সাথে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টকে সংযুক্ত করে দিন। এরফলে প্রতি মাসে আপনার নির্দিষ্ট করা টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মিউচুয়াল ফাণ্ডে জমা হয়ে যাবে। আপনি এই কাজটি IND Money অ্যাপ্লিকেশনটিতে খুব সজেই করতে পারবেন। এছাড়া আপনার প্রতি মাসে জমানো টাকা ১০ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে কত হবে IND Money তে তাও হিসেব করতে পারবেন।
তাহলে আর দেরী না করে অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করুন ও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে শুরু করুন।
সতর্কীকরণ: – শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ । তাই শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফণ্ডে বিনিয়োগ করার আগে সবদিক ভালো করে যাচাই করে নেবেন। এই পোস্ট পড়ে কেউ মিউচুয়াল ফাণ্ড বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন হলে, এই পোস্টের লেখক বা এই ব্লগের সাথে যুক্ত কেউ কোনোভাবেই দায়ী হবেন না।
আরও পড়ুন: –
মিউচুয়াল ফান্ডে কেনো বিনিয়োগ করবেন ? | Why to Invest in Mutual Funds
Good post