মিউচুয়াল ফান্ড বাংলা | মিউচুয়াল ফান্ড ক্যালকুলেটর | SBI মিউচুয়াল ফান্ড মিউচুয়াল ফান্ডের সুবিধা মিউচুয়াল ফান্ড বর্তমান অবস্থা | ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ড | ইকুইটি ফান্ড
দীর্ঘকালীন মেয়াদে সম্পদ সৃষ্টি করতে হলে মিউচুয়াল ফান্ডের জুড়ি মেলা ভার। তাই আমরা অনেকেই মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে চাই, কিন্তু কোন মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবো সেই বিষয়ে অনুসন্ধান করার সময়, মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন ভারী ভারী শব্দ দেখে ঘাবড়ে যাই। তাই এই পোস্টের মাধ্যমে, আমরা মিউচুয়াল ফান্ড -এর সাথে সম্পর্কিত সমস্ত রকম টার্ম বা শব্দ গুলি সম্বন্ধে আলোচনা করাবো। আপনি যদি মিউচুয়াল ফান্ড সম্বন্ধে জানতে আগ্রহী হন, তাহলে এই পোস্ট শেষ অবধি অবশ্যই পড়বেন। মিউচুয়াল ফান্ড সম্বন্ধে আমাদের অন্য লেখা গুলি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
NAV | Unit
মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে, প্রত্যেক মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীকে তাঁর বিনিয়োগের সমপরিমাণ অংশীদারীত্ব দেওয়া হয়। এই অংশীদারীত্বই হলো Unit। আবার NAV হলো Net Asset Value। NAV অনেকটা শেয়ারের দামের মতো। সহজ ভাষায়, মিউচুয়াল ফান্ডের একটি ইউনিট কিনতে গেলে আপনাকে যে মূল্য দিতে হয়, তাই হলো NAV। এই NAV -এর মূল্য সময়ে সময়ে বাড়ে কমে। ধরা যাক কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের NAV ৫০ টাকা। অর্থাত্ কেউ, যদি ১,০০০ টাকা এই ফান্ডে বিনিয়োগ করে, তাহলে তিনি (১০০০/৫০) = ২০ ইউনিট অংশীদারীত্ব পেলেন।
এক্সপেন্স রেশিও
কোনো মিউচুয়াল ফান্ড যখন একটি ফান্ড চালু করে তখন সেই ফান্ডটির জন্য একজন ফান্ড ম্যানেজার নিয়োগ করে। সেই ফান্ড ম্যানেজারের তত্বাবধানে আবার একটি বা একাধিক দল গঠিত হয়। এই দল(গুলি) মিউচুয়াল ফান্ডে জমা করা আপনার টাকা কোথায় বিনিয়োগ করলে বেশী রিটার্ন আসবে, কোথায় বিনিয়োগে ঝুঁকি কম, বা কোথায় ঝুঁকি বেশী সাথে রিটার্নও বেশী, ইত্যাদি নিয়ে পর্যালোচনা করে। স্বভাবতই এই কাজের জন্য কোম্পানী তাদের বেতন দেয়, এবং সেই বেতনের অঙ্ক বেশ মোটা হয়। এছাড়া কোনো ফান্ড চালু করলে মিউচুয়াল ফান্ডের লক্ষ্য থাকে সেই ফান্ড থেকে কিছু মুনাফা ঘরে তোলা। এখন, এই দুটি কাজের জন্য টাকা আসবে কোথা থেকে? অবশ্যই যাঁরা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করছেন তাদের থেকেই নেওয়া হবে, কারণ মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীটি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থেই কাজ করছে। এই খরচের ফি বা মজুরিই হলো এক্সপেন্স রেশিও। মনে করা যাক, কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের এক্সপেন্স রেশিও ০.২০%। এর অর্থ হলো, বিনিয়োগকারী যদি ১০০ টাকা সেই ফান্ডে দেন তাহলে ৯৯.৮০ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ হবে এবং ২০ পয়সা, মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী নিজের কাছে রাখবে তার উপরিউক্ত খরচ গুলি চালানোর জন্য। এই এক্সপেন্স রেশিও, মোটামোটি ০.১% থেকে ১% হয়।
লক ইন পিরিয়ড
কোনও কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিনিয়োগ করা টাকা তুলে নেওয়া যায় না। এই নূন্যতম সময়ই হলো লক ইন পিরিয়ড। যদিও বেশীর ভাগ মিউচুয়াল ফান্ডেরই লক ইন পিরিয়ড থাকে না, বা থাকলেও তা খুবই অল্প দিনের হয়।
এক্সিট লোড
মিউচুয়াল ফান্ডে যখন কেউ বিনিয়োগ করেন, তখন নূন্যতম কিছু দিনের জন্য আপনাকে সেই ফান্ডটি চালু রাখতে হয়। যদি কোনও বিনিয়োগকারী সেই নূন্যতম সময়ের আগেই ফান্ডটি বন্ধ করে দিতে চান, তাহলে তাঁকে কিছু ফি দিতে হয়। এই ফিই হলো এক্সিট লোড। এই এক্সিট লোড, মোটামোটি ০.১% থেকে ১% হয়।
সিএজিআর
CAGR -এর পুরো কথা হলো Compound Annual Growth Rate। কোনো নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে কোনো মিউচুয়াল ফান্ড গড়ে কি হারে রিটার্ন দিয়েছে তা মাপা হয় CAGR দিয়ে। যদি বলা হয় কোনও মিউচুয়াল ফান্ডের শেষ ৫ বছরের CAGR ১৫%, তাহলে বুঝতে হবে ওই সময়ের ব্যবধানে ওই ফান্ডটির বৃদ্ধির গড় হার ১৫%, হতে পারে এই ৫ বছরের মধ্যে কোনও বছর ফান্ডটি ১৫% -এর কম হারে রিটার্ন দিয়েছে, আবার কোনও বছর ১৫% -এর বেশী হারে রিটার্ন দিয়েছে।
AUM
AUM-এর পুরো কথা হলো Asset under Management। এর অর্থ মিউচুয়াল ফান্ডটি মোট যত টাকা ফান্ডে খাটাচ্ছে তার পরিমাণ।
সিপ
SIP এর পুরো কথা হলো Systematic Investment Plan। SIP বলতে বোঝায় একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে নিয়মিত ভাবে বিনিয়োগ করে যাওয়া। অর্থাত্, মনে করা যাক, আপনার কাছে প্রতি মাসের শেষে ১,০০০ টাকা পড়ে থাকে, এবং আপনি প্রতি মাসে সেই ১,০০০ টাকা মিউচুয়াল ফান্ডে জমা করবেন। এর অর্থ আপনি ১,০০০ টাকার SIP চালু করবেন। যাঁরা দীর্ঘ সময়ের জন্য বিনিয়োগ করেন, তাঁরা SIP পদ্ধতিতেই বিনিয়োগ করেন। SIP পদ্ধতিতে বিনিয়োগ করলে যেমন অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা বজায় থাকে, তেমনি দীর্ঘ সময়ে অনেক সম্পদ সৃষ্টি করা যায়।
মিনিমাম লাম্পসাম
কোনও কোনও মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা চালু করার সময় শুরুতে একটি মোটা অঙ্কের বিনিয়োগ করতে হয়। এই মোটা অঙ্কের বিনিয়োগই হলো মিনিমাম লাম্পসাম। তবে বর্তমানের বেশীর ভাগ মিউচুয়াল ফান্ড শুরু করার সময় মিনিমাম লাম্পসাম দিতে হয় না।
বেঞ্চমার্ক
কোনো মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী কেমন চলছে (পারফর্ম করছে) তা বিচার করার জন্য যে মাপ দন্ড ব্যবহার করা হয়, তাই হলো বেঞ্চমার্ক।
ফান্ড ম্যানেজার | Fund Manager
যখনই কোনও মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী কোনও নতুন ফান্ড চালু করে, তখন, সেই ফান্ডটি চালানোর জন্য তাঁরা একজন নেতা নিয়োগ করেন। এই নেতাই হলেন ফান্ড ম্যানেজার। ফান্ড চালানো ও ফান্ড থেকে মুনাফা করার দায়িত্ব থাকে এই ফান্ড ম্যানেজার এর ওপর। এই ফান্ড ম্যানেজারকে সাহায্য করার জন্য তাঁর অধীনে এক বা একাধিক দল কাজ করে।
Fund Allocation
বিভিন্ন মিউচুয়াল ফান্ড বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করে, যেমন, ইকুইটি, ডেট, ক্যাশ ইত্যাদিতে। কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ করার ধরণের ওপর ভিত্তি করে তার Fund Allocation নির্ধারিত হয়।
Sector Allocation
যেসব মিউচুয়াল ফান্ড ইকুইটি বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে, তাঁরা বিভিন্ন সেক্টর যেমন, অটো সেক্টর, ইনফর্মেশন টেকনোলজি সেক্টর, ফার্মা সেক্টর ইত্যাদি বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগ করে। এটাই হলো কোনো মিউচুয়াল ফান্ডের Sector Allocation।
টার্ন ওভার রেশিও
সাধারণত ইকুইটি মিউচুয়াল ফান্ডগুলি প্রতি বছর তাদের বিনিয়োগ করা শেয়ার গুলির পরিবর্তন করে এবং তার বদলে, নতুন কিছু কোম্পানীর শেয়ারে বিনিয়োগ করে। এই নতুন কোম্পানীর হারই হলো টার্ন ওভার রেশিও। ব্যাপারটি একটি উদাহরণের সাহায্যে বোঝা যাক। ধরা যাক, কোনো মিউচুয়াল ফান্ড আগের বছর ১০টি কোম্পানীতে বিনিয়োগ করেছিল। এই বছর সেই ১০টি কোম্পানীর মধ্যে ৪টি কোম্পানীকে হটিয়ে নতুন ৪টি কোম্পানীতে বিনিয়োগ করা হলো। তাহলে বলা হবে, এই ফান্ডের টার্ন ওভার রেশিও ৪০%।
শেষ কথা
মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। তাই এই লেখার মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করলাম, মিউচুয়াল ফান্ড সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়গুলি সহজ সরল ভাষায় আপনাদের সামনে উপস্থাপিত করতে। যদি আমাদের এই প্রয়াস আপনার ভাল লেগে থাকে তাহলে, এই লেখাটি অন্যদের সাথে শেয়ার করে তাদেরও জানার সুযোগ করে দিন। এই বিষয়ে আপনার মনে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে জানান বা আমাদের মেইল করুন [email protected] -এ। এছাড়া এই ব্লগে আমরা ফাইন্যান্স বিষয়ক বিভিন্ন লেখা প্রকাশ করি। যাতে আমাদের একটি লেখাও আপনার নজর না এড়ায়, তার জন্য ডান দিকের লাল রঙের ঘণ্টা আইকনটিতে ক্লিক করে নোটিফিকেশন চালু করে রাখুন। আপনার মূল্যবান সময় ব্যয় করে লেখাটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
সতর্কীকরণ: – শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ । তাই শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফণ্ডে বিনিয়োগ করার আগে সবদিক ভালো করে যাচাই করে নেবেন। এই পোস্ট পড়ে কেউ মিউচুয়াল ফাণ্ড বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন হলে, এই পোস্টের লেখক বা এই ব্লগের সাথে যুক্ত কেউ কোনোভাবেই দায়ী হবেন না।