আমাদের আগের পোস্টে আমরা মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছি। আপনি যদি এখনও পোস্টটি না পড়ে থাকেন, নীচের লিঙ্কে ক্লিক করে এখনই পোস্টটি পড়ে ফেলুন।
মিউচুয়াল ফান্ড সম্বন্ধে আমাদের আগের পোস্টটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
এই পোস্টে আমরা আলোচনা করবো কেনো আপনার মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা উচিত, সেই বিষয়ে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, একজন বিনিয়োগকারী কি কি কারণে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করবেন।
১) আপনাকে কোনো রকম অনুসন্ধান বা Research করতে হয় না
যেসকল মিউচুয়াল ফান্ড গুলি থেকে উচ্চ হারে রিটার্ন পাওয়া যায় সেগুলি মূলত শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে। এক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীই সমস্ত অনুসন্ধান করে; যেসব শেয়ার ভাল রিটার্ন দেবে অনুমান করে, সেখানে বিনিয়োগ করে। এই কাজটি কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারী করতে গেলে তাঁর প্রয়োজন শেয়ার বাজার সম্বন্ধে অগাধ জ্ঞান এবং ব্যাপারটি প্রচুর সময়সাপেক্ষও বটে। তবে কোনো বিনিয়োগকারী যদি মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেন, সে ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীই বিনিয়োগকারীর হয়ে এই কাজতে করে।
২) বিশেষজ্ঞ -এর অভিজ্ঞতা
প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী তাদের ফান্ড চালানোর জন্য বিশেষজ্ঞ দের একটি দল গঠন করে। এই দলের নেতৃত্ব দেন একজন ফান্ড ম্যানেজার। এই দল এবং ফান্ড ম্যানেজার কোথায় বিনিয়োগ করলে বেশী রিটার্ন পাওয়া যাবে, কোথায় বিনিয়োগ করলে ঝুঁকি বেশী, কোথায় ঝুঁকি বেশী অথচ রিটার্ন ও বেশী ইত্যাদি সম্পর্কে অনেক অভিজ্ঞ হন। ফলে একজন সাধারণ বিনিয়োগকারী এঁদের অভিজ্ঞতার সুবিধা লাভ করেন।
৩) ফান্ড ম্যানেজার ও তার দলের মর্যাদা
কোনো মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীর ফান্ড ম্যানেজার এবং তার দলের চাকরী নির্ভর করে সেই মিউচুয়াল ফান্ডটির সাফল্যের ওপর। অর্থাত্, যদি মিউচুয়াল ফান্ডটি নেগেটিভ রিটার্ন দেয় সেক্ষেত্রে তাদের চাকরী নিয়ে টানাটানি পড়তে পারে। তাই সাধারণত মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীগুলি খুব উচ্চ রিটার্ন এর আশায় এমন কোনো শেয়ারে বিনিয়োগ করার ঝুঁকি নিতে চায় না, যেখানে ক্ষতির সম্ভাবনা আছে। অর্থাত্ বিনিয়োগকারীর টাকা সুরক্ষিত থাকে।
৪) আপনার কেনা শেয়ার গুলিকে আপনাকে ট্র্যাক করতে হয় না
শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার পর, শেয়ার গুলি সম্বন্ধে প্রতিনিয়ত খোঁজখবর রাখতে হয়। যে শেয়ার বিনিয়োগ করা হয়েছে সেই কোম্পানী ঠিকঠাক চলছে কিনা, কোম্পানীর ম্যানেজম্যাণ্ট -এ কোনও রদবদল হলো কিনা, কোম্পানী মুনাফা লাভ করছে কিনা, ইত্যাদি বিষয় সম্বন্ধে কোনো সাধারণ বিনিয়োগকারীর পক্ষে সবসময় খোঁজ খবর করা খুবই কঠিন কাজ। তবে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে এই কাজটি মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীর গঠিত দলটিই করে। ফলে আপনাকে আর কোনো কষ্ট করতে হয় না।
৫) কম টাকায় বিনিয়োগ
আপনি যদি কোনো বড় কোম্পানী যেমন MRF, PAGE Industries, Nestle, Bajaj Finserv ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করতে চান তাহলে আপনার অনেক মূলধন প্রয়োজন। উদাহরণ স্বরূপ PAGE Industries -এর একটি শেয়ার এর দাম ৪১,০০০ টাকা। অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে মাত্র ১০০ টাকা থেকেই বিনিয়োগ শুরু করা যায়।
৬) Diversification
মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী তার ফান্ডের অর্থ বিভিন্ন কোম্পানীতে বিনিয়োগ করে। এর ফলে আপনি খুব কম টাকায় বৈচিত্রতা (Diversification) পেয়ে যান।
৭) SIP -এর সুবিধা
সব মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানী গুলিতেই SIP বা Systematic Investment Plan -এর সুবিধা আছে। অর্থাত্, আপনি প্রতি মাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। একবার ব্যাঙ্কের সাথে আপনার মিউচুয়াল ফান্ডকে সংযুক্ত করে দিলে স্বয়ংক্রিয় (Automatic) ভাবে প্রতি মাসে আপনার অর্থ মিউচুয়াল ফান্ডে জমা হয়ে যাবে।
৮) ঝুঁকি
নিজে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করলে অনেক সময় ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানীর কাছে যেহেতু দল আছে তাই এই ক্ষেত্রে ঝুঁকির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
৯) রিটার্ন
প্রায় সব মিউচুয়াল ফান্ডই দীর্ঘ সময়ের ব্যবধানে (কমপক্ষে ৫-৭ বছর) প্রতি বছর গড়ে ১২-১৫% হারে রিটার্ন দেয়। এই রিটার্ন অবশ্যই ফিক্সড ডিপোজিট বা পিপিএফ থেকের অনেক বেশী।
১০) তারল্য বা Liquidity
মিউচুয়াল ফান্ডের একটি বড় সুবিধা হলো তারল্য বা Liquidity। ফাইনান্স বা অর্থনীতির ক্ষেত্রে Liquidity বলতে বোঝায়, আপনি কত সহজে আপনার অর্থ ক্যাশ ফর্মে রুপান্তর করতে পারছেন। মিউচুয়াল ফান্ড বিক্রি করলে দুই দিনের মধ্যেই আপনার অর্থ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ফেরত পাওয়া যায়।
১১) কর
বিভিন্ন ট্যাক্স সেভিং মিউচুয়াল ফান্ড বা Equity Linked Mutual Fund -এ কর ছাড়ের সুবিধা আছে। এই ধরণের মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করলে বিনিয়োগের ওপর ১,৫০,০০০ টাকা অবধি কর ছাড় পাওয়া যায়।
আপনি বাড়ী বসে আপনার মোবাইল থেকে অনলাইনেই মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। এর জন্য একটি খুব ভালো মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন হলো IND Money। এই অ্যাপ্লিকেশনটির মাধ্যমে খুব সজেই মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন। এছাড়াও এই অ্যাপ্লিকেশন টিতে অনেক মিউচুয়াল ফান্ড নথিভুক্ত রয়েছে।
IND Money অ্যাপ্লিকেশনটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন
ZERODHA -তে ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
UPSTOX -এ ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
সতর্কীকরণ: – শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফাণ্ডে বিনিয়োগ করা সবসময় ঝুঁকিপূর্ণ । তাই শেয়ার বাজার বা মিউচুয়াল ফণ্ডে বিনিয়োগ করার আগে সবদিক ভালো করে যাচাই করে নেবেন। এই পোস্ট পড়ে কেউ মিউচুয়াল ফাণ্ড বা শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করে ক্ষতির সম্মুখীন হলে, এই পোস্টের লেখক বা এই ব্লগের সাথে যুক্ত কেউ কোনোভাবেই দায়ী হবেন না।